জামায়াত–এনসিপি সম্পর্কের টানাপোড়েন: পটভূমি ও বর্তমান অবস্থা
আগামী নির্বাচন ও রাজনৈতিক সংস্কার ইস্যুতে একসময় জামায়াতে ইসলামী এবং জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ঐকমত্য তৈরি হয়েছিল। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে যুগপৎ আন্দোলনেরও পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে দুটি দলের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, যা রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
যুগপৎ আন্দোলনে অনীহা
সোমবার জামায়াতে ইসলামী ইসলামী আন্দোলন, খেলাফত মজলিসসহ চারটি দল নিয়ে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সেখানে নেই এনসিপি। দলটির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং ঘনিষ্ঠ সূত্র জানাচ্ছে, সংস্কার ইস্যুতে এনসিপির ভেতরে দুটি ভিন্নমত তৈরি হয়েছে।
জামায়াতের অবস্থান: পিআর পদ্ধতি দুই কক্ষেই চাই।
এনসিপির অবস্থান: শুধু উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি চায়।
এই মতপার্থক্যের কারণে এনসিপি আপাতত যুগপৎ আন্দোলনে যাচ্ছে না। এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, “সব দাবিতে একমত না হওয়া এবং নির্বাচনি জোট নিয়ে অস্পষ্টতা থাকার কারণে আপাতত জামায়াতের সাথে একাত্ম হচ্ছি না।”
নির্বাচনি জোট নিয়ে দ্বিধা
আগামী ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের আগে বিএনপি-বিরোধী বৃহত্তর জোট গঠনের চেষ্টা করছে জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দলগুলো। ধারণা করা হচ্ছিল এনসিপিও এই জোটে থাকতে পারে।
কিন্তু এনসিপির একাংশ মনে করে—
জামায়াতের সাথে ভোটে গেলে ক্ষমতায় না আসতে পারলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হবে।
বামঘরানার তরুণরা ধর্মভিত্তিক জোটে যেতে রাজি নয়।
ফলে এনসিপি আপাতত কোনো নির্বাচনি জোটে না গিয়ে স্বাধীন রাজনৈতিক কর্মসূচির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।
ছাত্র রাজনীতির ফলাফল ও প্রভাব
ডাকসু ও জাকসুর সাম্প্রতিক নির্বাচনে জামায়াত-সমর্থিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের নিরঙ্কুশ বিজয়ে এনসিপি-সমর্থিত ছাত্র সংগঠন চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এতে দলটির ভেতরে হতাশা এবং মতবিরোধ উভয়ই বেড়েছে।
দলের বামপন্থি অংশ জামায়াতঘেঁষা অবস্থান থেকে সরে আসার পরামর্শ দিচ্ছে। সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদীব বলেছেন, “জামায়াতের সাথে আমাদের এখন কোনো দূরত্ব বা ঘনিষ্ঠতা কোনোটিই নেই। আমরা আপাতত নিজস্ব কর্মসূচিতেই মনোযোগ দিচ্ছি।”
বিশ্লেষকদের দৃষ্টিভঙ্গি
রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাশেদা রওনক খান মনে করেন, এনসিপি নতুন দল হওয়ায় ভিন্নমত এবং কৌশলগত দ্বিধা থাকা স্বাভাবিক। আপাতত দূরত্ব মনে হলেও নির্বাচনের সময় ঘনালে অবস্থান বদলাতে পারে।
তিনি বলেন, “মতাদর্শ, ব্যক্তিগত স্বার্থ, রাজনৈতিক লক্ষ্য—সব মিলিয়েই এখন মতভেদ তৈরি হচ্ছে। তবে এর মানে এই নয় যে চূড়ান্ত বিচ্ছেদ ঘটেছে।”
সারসংক্ষেপ
মতপার্থক্য: জুলাই সনদ বাস্তবায়ন, পিআর পদ্ধতি, নির্বাচনি জোট
এনসিপির দ্বিধা: জামায়াতের সাথে যুক্ত হয়ে স্বল্পমেয়াদে লাভ হলেও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির আশঙ্কা
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা: নির্বাচনের সময় ঘনালে অবস্থান বদলাতে পারে এনসিপি
ফলে জামায়াত-এনসিপি সম্পর্ক আপাতত শীতল হলেও রাজনৈতিক অঙ্গনে পরিস্থিতি দ্রুত বদলে যেতে পারে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।